অনেকেই মনে করেন 'নবাব' মানেই যথার্থ বীর্যবান। যার প্রতিটি কার্যক্রমে কঠোর পৌরুষত্বের প্রকাশ পায়। আর সমাজব্যবস্থার এই দাগিয়ে দেওয়া সংজ্ঞার বাইরে যারা, তারা মানসিক ব্যাধিগ্রস্থ। সত্যিই কি তাই? এই প্রশ্নই যেন ওয়াজিদ আলি শাহের সমগ্র জীবনব্যাপী জেহাদের জয়ধ্বনি।
তাই একদিকে যখন ভারতবর্ষ জ্বলছে সিপাহী বিদ্রোহের আগুনে, অন্যদিকে ইংরেজ দের শোষক রক্তচক্ষুর সামনে লখনউ ছেড়ে আসা এই মানুষটিই কলকাতার মেটিয়াবুরুজকে নিজ স্বপ্ন সাম্রাজ্যের মতো করে গড়ে তুলছেন।নিজের প্রতিটা যাপনে চিহ্ন রেখে যাচ্ছেন সেই সুখের;যা বাঁধন ভাঙা ,নিজেকে নিজের মতো করে সাজানোর ন্যায় পরমস্পর্শী।
তাই তো একদিকে তার নবাবী কাঠামো ভেঙে বেড়িয়ে এসেছে সাধারণের কথা ভাবা মাটির মন। যার দরুন তার প্রথম বিরিয়ানি তে আলুর ব্যাবহার।যা স্বল্প ব্যায়ে সহজে হজম হওয়া খাদ্য হিসাবে বর্তমানে প্রচলিত।অন্যদিকে তার শিল্পী মন বিভোর থেকেছে ঠুমরি,গজল ধ্রুপদী শিল্প সাধনায়।
রচনা করেছেন ' রাধা কানহাইয়া কা কিসসা'নাটক।সর্বোপরি তার মেটিয়াবুরুজ দরবারে নর্তকী বেশে নৃত্য উপস্থাপনা এবং কত্থকের বোল এযেন লিঙ্গবৈষম্য ভাঙনের সেই উৎস মুখ।যে ভাঙার খেলা শাসকের কঠিন শিকল মাঝে আজও অব্যাহত।রাকেশ ঘোষ পরিচালিত নাটক ' নবাব ' সেই হার না মানা মানুষদের প্রতিনিধিত্বকারী ওয়াজিদ আলি শাহের জীবন উপাখ্যান।যার প্রতিটি আলো - ছায়ায়,চরিত্রদের ওঠা - বসা উজ্জীবিত সব হারিয়েও জিতে যাওয়ার উল্লাস।তাই কাহিনী প্রবাহে জীবন্ত হয়ে ওঠে যখন একে একে নারীসুলভ বলে ওয়াজিদ আলি শাহের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তার তাজ-সাম্রাজ্য,তবুও হাসি মুখে গেয়ে গেছে নিজের মতো করে বেচেঁ থাকার গান।
তাই তো চিড়িয়াখানা, ঠুংরী,গজল, কত্থকের নব রীতির স্রষ্ঠা নবাক কে যখন ফোর্ট উইলিয়ামে গৃহ বন্দি করা হয়, যথার্থ শিল্পীর মতো সে নিভৃতে কাব্য রচনায় ব্রতী থাকে।তার এই জেহাদ মুষ্টি, হার না মানা যাপনের সাক্ষী এই নাটক। যা এই কলকাতার বুক চিড়ে বয়ে চলা বুড়ি গঙ্গা, 'প্রান্তিক' নামে দাগিয়ে দেওয়া মানুষদের প্রতিদিনের বাঁচার ন্যায় ধ্রুব।
এমন একটা বিষয়কে কেন্দ্র করেই রাকেশ ঘোষের নির্দেশনায়, দমদম শব্দমুগ্ধ নাট্যকেন্দ্র প্রযোজনা করেছে নতুন নাটক 'নবাব'।
নাটকটির সংগীত পরিচালনা করেছেন অভিজিৎ আচার্য্য। অভিনয় করেছেন রঞ্জন বসু, কৃষ্ণা রায়, লোপামুদ্রা গুহ নিয়োগী, অভিষেক মুখোপাধ্যায়, সৌভিক ঘোষ, মেঘা দেবনাথ, প্রসেনজিৎ কুন্ডু, কৃশানু চক্রবর্তী, সন্দীপ ঘোষ, কৌস্তুভ মজুমদার।
No comments:
Post a Comment