কলকাতা: কোলকাতা ক্রিয়েটিভ আর্ট পারফরমার্স এর প্রযোজনায় ২৩ জানুয়ারি গিরিশ মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়ে গেল দুটি নাটক। 'চৈত্রশেষে' এবং 'বড় মুখে ছোট কথা'। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিন্ন স্বাদের এই দুটি নাটকে বাস্তবধর্মী এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় উঠে এসেছে। এদিন কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রথমেই মঞ্চস্থ হয় চৈত্র শেষে নাটকটি। যেখানে একটি সাধারণ মেয়ের জীবন সংগ্রামের গল্প উঠে এসেছে। শালিনী রায়, তাদের সাধের দোকান SINE -কে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। যার শুরুতে পাশে ছিলো তার বাবা-মা ও বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়। কিন্তু কিছুদিন পর বাবা-মা'র মৃত্যু ও মৃত্যুঞ্জয়ের আত্মহত্যা তার মনকে নাড়া দিয়ে যায়।
শালিনী ক্রমশ নিঃস্বহায় হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় জীবনের ওঠা-পড়াকে মেনে নিয়ে, সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে সে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। নির্দেশক কিংশুক ব্যন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, 'চৈত্রশেষে নাটকটি মূলত একটি মেয়ের লড়াইয়ের গল্প। আসলে আমরা প্রত্যেকেই কোথাও না কোথাও গিয়ে একা। একদিন আমি একটি শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। যেখানে কয়েকটি ম্যানিকুইন সুসজ্জিত পোশাকে সেজেছিল।
শপিং মলে নানান মানুষ আসছেন তাদের ছুঁয়ে দেখছেন, ভালো লাগলে পোশাকটা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন আমার মনে হয়েছিল আসলে আমার প্রত্যেকটা মানুষই পণ্য এবং আমরা নিজেদের বিক্রি করার জন্য, সেলেবেল তৈরি করার জন্য এগিয়ে চলেছি আমাদের জীবনযুদ্ধে। আর সেই নিয়েই যত যুদ্ধ যত লড়াই। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে শালিনী রায় নামে একটি মেয়ে জীবনে কিভাবে একা হয়ে পড়লো এবং একা লড়াই করছে,সারভাইভ করছে প্রতিটি পরিস্থিতির মধ্যে থেকে সেই কথাই উঠে এসেছে নাটকে।
বর্তমানে তার এখন বন্ধুত্ব সমস্ত জড় বস্তুর সঙ্গে। এখন সে জড় বস্তুদের মধ্যেই বেঁচে রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে প্রাণ খুঁজে পাচ্ছে। এরকমই একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে চৈত্র মাসের শেষের দিন হঠাৎ একটা কালবৈশাখী ঝড় ওঠে। যেভাবেই প্রতিটা মানুষের জীবনেই কখনও না কখনও একটা ঝড় ওঠে আবার থেমেও যায়। নতুনের আনন্দে আবার মেতে ওঠে। এই ভাবনা থেকেই চৈত্রশেষে'।এদিনের দ্বিতীয় প্রযোজনা ছিল ‘বড় মুখে ছোট কথা’। এই নাটকটির নির্দেশনাতেও ছিলেন কিংশুক ব্যন্দ্যোপাধ্যায়। নাটকটির রচয়িতা সৌমিতা ব্যনার্জ্জী নাট্যভাবনা সম্পর্কে জানালেন, 'রবীন্দ্রনাথের কবিতা বরাবরই আমাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। আমরা ছোটদের নিয়ে অনেক কাজ করি ওয়ার্কশপ করি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছিল আমরা বড়রা যদি নিজেদেরকে ছোটদের জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখি কিংবা বড়রা ছোটদের নিয়ে কি ভাবছেন সেই নিয়ে যদি কোন কাজ করা যায়। নাটকের ভাবনা মূলত রবীন্দ্রনাথের হারিয়ে যাওয়া কবিতাটি। যেখানে একটি লাইন রয়েছে, 'বামী...হারিয়ে গেছি আমি!' তবে এই হারিয়ে যাওয়া কিন্তু অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া নয়। যেভাবে রবীন্দ্রনাথ বলতে চেয়েছেন শুধুমাত্র অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া নয়,পরিস্থিতির চাপে এখনকার বাচ্চারা যেভাবে বড় হচ্ছে যেভাবে তাদের উপর সবকিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাতে করে তারা কিন্তু তাদের শৈশবকে হারিয়ে ফেলছে'।
No comments:
Post a Comment